টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রতিকারের উপায় কি
আসসালামু আলাইকুম। আমার প্রাণপ্রিয় পাঠক ও পাঠিকা গন আপনারা সবাই কেমন আছেন আশা করি ভাল আছেন। আজকে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তা হল টাইপ টু ডায়াবেটিস।
বর্তমানে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেখা যায় বর্তমান বিশ্বে দেড়শ মিলিয়ন লোক সারা পৃথিবী জুড়ে আক্রান্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি ছাড়িয়ে যেতে পারে।বাংলাদেশের দিক থেকে দেখা যায় সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দশম স্থানে। আমার মনে হয় দেশের প্রতিটি পরিবারে কমপক্ষে একজন হলেও এর রোগে আক্রান্ত।
আজকে আমাদের মূল বিষয় হলো টাইপ টু ডায়াবেটিস সম্পর্কে ।কিন্তু টাইপ টু ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানার আগে আমাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে ধারণা রাখা দরকার।
আমাদের শরীরে পেটের ঠিক উপরের অংশে অগ্নাশয় বলে একটি গ্রন্থি রয়েছে। দেখতে অনেকটা পাতার মতো। এই অগ্ন্যাশয় থেকে একটি রস নিঃসৃত হয় ,যাকে আমরা বলি ইনসুলিন। এই ইনসুলিন হলো হরমোন। এটা আমাদের স্বাভাবিক বিপাকক্রিয়ার জন্য জরুরী।
আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খাই তা একসময় রক্তে মিশে যাই এবং পরবর্তীতে শরীরে চিনির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে এই চিনি কে শরীরের বিভিন্ন কোষে নিয়ে যাওয়া যেমন লিভারে বা মাংসপেশি এবং এবং তা শরীরে শক্তি বা ক্যালোরি উৎপন্ন করে। কোন কারনে যদি শরীরে ইনসুলিন নিঃসৃত না হয়, তাহলে শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় একেই বলে ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিসের প্রকারভেদ:
এবার আসুন ডায়াবেটিস কত প্রকারের হতে পারে এটা জেনে নেই।
ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকার হয়ে থাকে
১) টাইপ ১ডায়াবেটিস এবং ২)টাইপ ২ ডায়াবেটিস
টাইপ ১ডায়াবেটিস :
টাইপ ১ডায়াবেটিস জেনেটিক কারণে হতে পারে। শরীরের ভিতরে ইনসুলিন তৈরি হয় না এটা শিশুদের থেকে শুরু করে সবার হতে পারে। এটা কে অটো ইমিউন ডিসঅর্ডার বলা হয়।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত অস্বাভাবিক জীবনযাত্রার কারণে হতে পারে। যেমন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন, শরীরে অতিরিক্ত মেদ তৈরি হওয়া, হাই ব্লাড প্রেসার, সঠিকসময়ে না ঘুমানো বা অতিরিক্ত ঘুম। এর বাইরেও আরো অনেক কারণে টাইপ ২ডায়াবেটিস হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে, ইনসুলিন এর উৎপাদন কমে যায় এবং গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় যার ফলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হয়ে থাকে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের লক্ষণ :-
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলো হলে আমরা বুঝতে পারবো যে টাইপ টু ডায়াবেটিসের দ্বারা আক্রান্ত।
১) ঘনঘন প্রস্রাব
২) অতিরিক্ত পিপাসা
৩) ওজন কম হওয়া
৪) ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
৫) অতিরিক্ত চুলকানি
৬) দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া
৭) এ রোগের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা হওয়া এবং নার্ভ সমূহ ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রতিকারের উপায় কি/ টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর চিকিৎসা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস একবার শরীরে বাসা বাঁধলে তার সহজে নিরাময় করা কঠিন। তবে আমরা টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রতিকারের উপায় কি তা জানতে পারি।
১)এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
২)খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে
৩)নিয়মিত ঔষধ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে
৪)অনেক বেশি কর্মঠ হতে হবে
৫)মানসিক টেনশন করা যাবেনা
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে স্বাস্থ্য জটিলতা ও করণীয় কি ?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস হলে আপনাকে স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
১)টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণে স্বাস্থ্য জটিলতা সমূহ হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে
২)ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
৩)ঘা,ক্ষত ও ইনফেকশন হতে পারে,
৪) গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে গর্ভ পরবর্তী মৃত সন্তান প্রস্রব।
৫)কিডনীগত সমস্যা
৬) দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া
৭)যৌন সমস্যা
করণীয়
১)রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখা ও ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চলা।
২) হার্ট ও কিডনি পরীক্ষা এবং সে অনুযায়ী ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ।
৩)ধূমপানের অভ্যাস থাকলে সেটা সম্পূর্ণ রূপে পরিহার করতে হবে।
৪)প্রতি ছয় মাস পর পর ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা ।
৫)সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে করা।
কোন বয়সে টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হতে পারে?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত যে কোন বয়সেই হতে পারে তবে শিশুদের থেকে মধ্য বয়সি এবং বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হয়।
এবার আসুন আমরা জেনে নেই টাইপ২ ডাইবেটিস হলে কোন কোন খাবার খাওয়া যাবে আর কোন কোন খাওয়ার খাওয়া নিষেধ।
যে খাবার খাওয়া যাবে/ টাইপ ২ ডায়াবেটিস ফুড চার্ট
১)উদ্ভিদ জাত প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন বাদাম ,মটরশুটি, আখরোট, ছোলা ইত্যাদি খাওয়া যাবে
২)সবুজ শাকসবজি
৩)ফল: আপেল, তরমুজ, কমলা, বেরি
৪)বীজ: কুমড়োর বীজ,চিয়া বীজ
৫)কালো কফি, বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ রস
যে খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা
১)যেকোনো ধরনের ভাজাপোড়া থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
২)চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে
৩)কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খাওয়া যাবে না যেমন দুগ্ধজাত খাবার সমূহ, ফাস্টফুড ভাজাখাবার, মিষ্টি জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত লবণ মিশ্রিত খাবার পরিহার করতে হবে
৪)এলকোহল বা নেশা জাতীয় দ্রব্যের অভ্যাস থাকলে তা সম্পূর্ণরূপে পরিহার করতে হবে।
ডায়াবেটিস কত হলে রোগী মারা যেতে পারে?
সাধারণত ৪০ mg/dl এর নিচে বা ৪০০ mg/dl এর বেশি হলে রোগী স্ট্রোক করতে পারে।
কত হলে নরমাল?
খালি পেটে 70 -110 mg/dl ,ভরা পেটে upto ১৪০ mg/dl এর বেশি হলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হিসেবে ধরা হয়।
আমাদের শেষ কথা
আমরা ডায়বেটিস সংক্রান্ত তথ্যসমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। পাশাপাশি টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর প্রতিকারের উপায় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস আপনাদের যদি বিন্দুমাত্র উপকারে আসে তাহলে আমাদের আজকের লেখাটি স্বার্থক হবে ।
ধন্যবাদ
সচরাচর প্রশ্ন উত্তর
টাইপ ২ ডায়াবেটিস কি?
টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত অস্বাভাবিক জীবনযাত্রার কারণে হতে পারে। যেমন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন, শরীরে অতিরিক্ত মেদ তৈরি হওয়া, হাই ব্লাড প্রেসার, সঠিকসময়ে না ঘুমানো বা অতিরিক্ত ঘুম। এর বাইরেও আরো অনেক কারণে টাইপ ২ডায়াবেটিস হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কি কি লক্ষণ রয়েছে?
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলো হলে আমরা বুঝতে পারবো যে টাইপ টু ডায়াবেটিসের দ্বারা আক্রান্ত।
১) ঘনঘন প্রস্রাব
২) অতিরিক্ত পিপাসা
৩) ওজন কম হওয়া
৪) ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া
৫) অতিরিক্ত চুলকানি
৬) দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়া
৭) এ রোগের ক্ষেত্রে হার্টের সমস্যা হওয়া এবং নার্ভ সমূহ ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া।
ডায়াবেটিস কত হলে রোগী মারা যেতে পারে?
সাধারণত ৪০ mg/dl এর নিচে বা ৪০০ mg/dl এর বেশি হলে রোগী স্ট্রোক করতে পারে।
আরো পড়ুন